itel City 100 : A Budget Smartphone with a Unique Sound Box Twist

আইটেল সিটি 100 : বাজেট ফ্রেন্ডলি ফোনের সাথে অনন্য সাউন্ড বক্স

আইটেল সিটি বাংলাদেশের বাজারে এসেছে একটি আকর্ষণীয় ডিভাইস নিয়ে, যার দাম মাত্র ১১,৯৯০ টাকা এবং এটি ৬ জিবি/১২৮ জিবি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে। এই ফোনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর সাথে দেওয়া একটি ম্যাগনেটিক সাউন্ড বক্স, যা আপনার মিডিয়া কনজামশনের অভিজ্ঞতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। এই রিভিউতে আমরা ফোনটির ডিজাইন, ডিসপ্লে, পারফরম্যান্স, ক্যামেরা এবং সেই বিশেষ সাউন্ড বক্স নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে আপনি বুঝতে পারেন এই ফোনটি ২০২৫ সালে আপনার টাকার মূল্য কতটা দিতে পারে।

আনবক্সিং: আইটেল সিটির সুন্দর প্যাকেজিং এবং গিফট

আইটেল আমাদের কাছে একটি দারুণ প্যাকেজিং-এ ফোনটি পাঠিয়েছে, যেখানে বেশ কিছু আকর্ষণীয় গিফট রয়েছে। তবে, দোকান থেকে কিনলে এই বিশেষ বক্সটি না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবুও, এই প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে আইটেল তাদের ব্র্যান্ডকে একটি প্রিমিয়াম ভাইব দিয়েছে। ফোনটির সাথে আসা সাউন্ড বক্সটি একটি অনন্য সংযোজন, যা আপনি ম্যাগনেটিকভাবে ফোনের সাথে এটাচ করতে পারেন। এটি আপনার ফোনকে শুধু ঠান্ডা রাখে না, বরং এর লাউড সাউন্ড দিয়ে পুরো এলাকাকে “গরম” করে তুলতে পারে—অবশ্যই, এখানে গরম বলতে সাউন্ডের কথা বলা হচ্ছে! এই স্পিকারটি মুভি বা টিভি দেখার সময় দুর্দান্ত সাউন্ড কোয়ালিটি প্রদান করে, যা এই দামের একটি ডিভাইসের জন্য বেশ চমকপ্রদ।

ডিজাইন: হালকা, পাতলা, কিন্তু প্রিমিয়াম ফিল

আইটেল সিটির ওজন মাত্র ১৮৫ গ্রাম এবং এর পুরুত্ব মাত্র ৭.৭ মিলিমিটার, যা এটিকে বেশ হালকা এবং পাতলা করে তুলেছে। রিয়ার প্যানেলে ফ্রস্টেড গ্লাসের মতো ফিনিশ রয়েছে, যা দেখতে দামি ফোনের মতো প্রিমিয়াম ভাইব দেয়। ক্যামেরা মডিউলটিও বেশ আকর্ষণীয়, যা এই ফোনটিকে আরও দামি দেখায়। তবে, বডি ফ্রেম এবং রিয়ার প্যানেল প্লাস্টিকের তৈরি। আমি সাজেস্ট করবো একটি কেস ব্যবহার করতে, যা ফোনটিকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি ম্যাগনেটিক সাপোর্টের যেকোনো এক্সেসরিজ কানেক্ট করার সুবিধা দেবে। এই দামে এমন ডিজাইন এবং ফিনিশ পাওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।

ডিসপ্লে: বড়, কিন্তু ওয়াটারড্রপ নচে হতাশা

আইটেল সিটিতে রয়েছে ৬.৭৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, যা এইচডি প্লাস রেজলিউশন এবং ৯০ হার্জ হাই রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করে। এই বাজেটে এইচডি প্লাস রেজলিউশন স্বাভাবিক, এবং ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের কারণে ডিসপ্লেটি বেশ স্মুথ ফিল দেয়। তবে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে ওয়াটারড্রপ নচ দেখে হতাশ লাগে। এই দামের ফোনে আমরা পাঞ্চ-হোল কাটআউট আশা করি, যা ডিসপ্লেকে আরও আধুনিক লুক দিত।

ব্রাইটনেসের ক্ষেত্রে, ডিসপ্লেটি ৭০০ নিটস পর্যন্ত যায়, কিন্তু ডিরেক্ট সানলাইটে কিছুটা সমস্যা করে। ইনডোর বা শ্যাডো এলাকায় ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। কালার রিপ্রোডাকশন বেশ ভাইব্রেন্ট, যা মিডিয়া কনজামশনের জন্য দারুণ। তবে, কাছ থেকে দেখলে এইচডি প্লাস রেজলিউশনের সীমাবদ্ধতা বোঝা যায়। সব মিলিয়ে, এই ডিসপ্লে মিডিয়া দেখার জন্য ভালো, বিশেষ করে যখন এটি সাউন্ড বক্সের সাথে জোড়া লাগানো হয়।

পারফরম্যান্স: বেসিক কিন্তু স্থিতিশীল

আইটেল সিটি চলে ইউনিসক ৭২৫০ প্রসেসরে, যা একটি এন্ট্রি-লেভেল চিপ। এটি বেসিক ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট, তবে হেভি গেমিং বা মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। ৬ জিবি র‍্যাম এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ (ইউএফএস ২.২) এই দামে প্রশংসনীয়। মেমোরি কার্ড সাপোর্ট রয়েছে, তাই একটি ভালো মানের মেমোরি কার্ড ব্যবহার করে স্টোরেজ বাড়ানো যায়।

অ্যাপ ওপেন-ক্লোজে কিছুটা অ্যানিমেশন ডিলে আছে, তবে ল্যাগ বা হ্যাংয়ের সমস্যা দেখা যায়নি। ৪-৫টি অ্যাপ একসাথে চালানো যায়, যা এই প্রাইস পয়েন্টে ভালো। তবে, গেমিংয়ের জন্য এই ফোনটি নয়। সাধারণ ২ডি গেম খেলে সময় কাটানো যায়, কিন্তু হেভি গেম খেলতে গেলে হতাশ হবেন। ফোনটি নরমাল ব্যবহারে গরম হয় না, যা একটি বড় প্লাস পয়েন্ট।

অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে অ্যানড্রয়েড ১৪, যদিও ২০২৫ সালে অ্যানড্রয়েড ১৫ দিয়ে আসা উচিত ছিল। এই দিকটিতে আইটেল আরেকটু এগিয়ে থাকতে পারতো।

ক্যামেরা: পোর্ট্রেটে চমক, তবে সীমাবদ্ধতা আছে

আইটেল সিটির রিয়ারে ১৩ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি ক্যামেরা এবং ফ্রন্টে ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা রয়েছে। রিয়ারে দেখতে তিনটি ক্যামেরার মতো মনে হলেও মূলত একটিই কাজ করে। এই দামে মেগাপিক্সেল নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই, তবে ইমেজ প্রসেসিংয়ে কিছুটা দুর্বলতা আছে। ছবিগুলো ভাইব্রেন্ট এবং বুস্টেড কালার দেয়, কিন্তু জুম করলে ডিটেইলের অভাব বোঝা যায়। হেভি লাইটিং কন্ডিশনে ক্যামেরা স্ট্রাগল করে, এবং এক্সপোজার কন্ট্রোলেও সমস্যা দেখা যায়। তবে, সফট লাইটিংয়ে ব্যবহারযোগ্য ছবি পাওয়া যায়।

পোর্ট্রেট মোডে এই ফোনটি চমক দেখিয়েছে। ১১,৯৯০ টাকার ফোনে ১x এবং ২x ফোকাল লেন্থে পোর্ট্রেট ছবি তুলতে পারা বেশ অবাক করার মতো। তবে, এজ ডিটেকশনে কিছুটা মিসম্যাচ আছে, এবং ২x ছবিগুলো কিছুটা সফট মনে হয়। ফ্রন্ট ক্যামেরা ভিডিও কলিংয়ের জন্য ভালো, তবে ছবিতে সফটনেস এবং স্কিন টোনের কিছুটা ওয়ার্ম প্রেজেন্টেশন লক্ষ্য করা যায়। লো-লাইটে ক্যামেরার পারফরম্যান্স গড়পড়তা, যা এই বাজেটে আশা করাই যায়।

সাউন্ড বক্স: এই ফোনের ইউএসপি

আইটেল সিটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হলো এর সাউন্ড বক্স। এই ম্যাগনেটিক স্পিকারটি ফোনের সাথে এটাচ করে মুভি বা মিউজিক উপভোগ করলে দুর্দান্ত সাউন্ড কোয়ালিটি পাওয়া যায়। সিঙ্গেল মনো স্পিকার হলেও এটি বেশ লাউড এবং ক্লিয়ার। সাউন্ড বক্সের সাথে বেসও পাওয়া যায়, যা এই দামের ফোনে বিরল। তবে, স্টেরিও সাউন্ডের অভাব কিছুটা খটকা লাগে। এই সাউন্ড বক্স এই ফোনটিকে মিডিয়া কনজামশনের জন্য আদর্শ করে তুলেছে, বিশেষ করে বড় ডিসপ্লে এবং ভাইব্রেন্ট কালারের সাথে মিলে।

ব্যাটারি এবং চার্জিং: নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স

ফোনটিতে রয়েছে ৫২০০ এমএএইচ ব্যাটারি, যা ১৮ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। বক্সে ১৮ ওয়াটের চার্জার দেওয়া আছে, যা এই বাজেটে প্রশংসনীয়। এই ব্যাটারি দিয়ে নরমাল ব্যবহারে প্রায় দেড় দিন এবং হেভি ব্যবহারে এক দিনের ব্যাকআপ পাওয়া যায়। চার্জিং স্পিডও এই দামে গ্রহণযোগ্য।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারটি সাইড-মাউন্টেড এবং বেশ ফাস্ট, তবে বাটনের পজিশন কিছুটা নিচে, যা প্রথমে অসুবিধাজনক লাগতে পারে। তবে, অভ্যস্ত হয়ে গেলে এটি কোনো সমস্যা নয়।

সুবিধা এবং অসুবিধা: আইটেল সিটি কি আপনার জন্য?

সুবিধা:

  • ১১,৯৯০ টাকায় ৬ জিবি/১২৮ জিবি এবং মেমোরি কার্ড সাপোর্ট।
  • অনন্য ম্যাগনেটিক সাউন্ড বক্স, যা দুর্দান্ত সাউন্ড কোয়ালিটি দেয়।
  • পাতলা এবং প্রিমিয়াম লুকিং ডিজাইন।
  • ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট সহ বড় ডিসপ্লে।
  • ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং ফাস্ট চার্জিং।
  • পোর্ট্রেট মোডে ১x এবং ২x ফোকাল লেন্থ।

অসুবিধা:

  • ওয়াটারড্রপ নচ, যা ২০২৫ সালে পুরনো লাগে।
  • এইচডি প্লাস রেজলিউশন কাছ থেকে দুর্বল মনে হয়।
  • ক্যামেরা প্রসেসিংয়ে ঘাটতি এবং লো-লাইটে দুর্বল পারফরম্যান্স।
  • অ্যানড্রয়েড ১৪, যেখানে অ্যানড্রয়েড ১৫ আশা করা যেত।
  • এন্ট্রি-লেভেল প্রসেসর, গেমিংয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।

উপসংহার: আইটেল সিটি কি কিনবেন?

আইটেল সিটি একটি বাজেট ফ্রেন্ডলি ফোন, যা মিডিয়া কনজামশন এবং নরমাল ব্যবহারের জন্য দারুণ। এর সাউন্ড বক্স এবং প্রিমিয়াম ডিজাইন এটিকে এই দামে অনন্য করে তুলেছে। তবে, ওয়াটারড্রপ নচ এবং গড়পড়তা ক্যামেরা পারফরম্যান্স কিছুটা হতাশ করতে পারে। আপনি যদি মিডিয়া দেখতে ভালোবাসেন এবং সাউন্ড কোয়ালিটির উপর জোর দেন, তাহলে এই ফোনটি আপনার জন্য।

Back to top button